দিনাজপুরের খানসামায় আমন ধানের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন সবুজের বিছানা। যেদিকে চোঁখ যায় সেদিকেই শুধু সবুজের সমারোহ। এ যেন এক নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্য। কৃষকের আগামীর সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সেই সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে। কোথাও কোথাও চারা থেকে শিষ বের হয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে। আবার কোথাও খুব তাড়াতাড়ি চারা থেকে শিষ বের হবে।
এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন লাগাতে কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝিতে আমন ধান চাষ করার নিয়ম থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় তা পারেননি কৃষকরা। ধান রোপন নিয়ে বিপাকে পরে কৃষকেরা।এই পরিস্থিতিতে নিরুপায় হয়ে আমন ধানের চারা রোপণ ও ধানক্ষেত রক্ষায় শ্যালো মেশিন কিংবা বিদ্যূৎ চালিত সেচ পাম্প দিয়ে জমিতে সেচ দিয়েছেন অনেক কৃষক। আর সে কারণেই এবার উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের আমন রোপন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কম হয়েছে।
খানসামা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভাল রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। মাঝে মধ্যে হচ্ছে বৃষ্টি, আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা।
ধানের চারাগুলো থেকে কয়েকদিন পর বের হবে থোর। আর কিছুদিন পরই কৃষকদের আমন ক্ষেতে বের হবে মৌ মৌ গন্ধ। এর পরই সকলের নজর কাড়বে সোনালি ধান। সোনালী স্বপ্নে সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শুন্য গোলা। গৃহীনির মুখে ফুটবে হাঁসি।
উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ান গড় গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক,শাহজালাল ও আব্দুল মতিনসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে বললে তারা জানায়, এবার ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে হয়েছে। জ্বালানি তেল, সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘা প্রতি আমন আবাদে খরচ হয়েছে আগের তুলনায় প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি। যদি ভাল ফসল হয় তবেই এসব পুষিয়ে নিতে পারবো।
বেলাল ইসলাম নামে অপর আরেক কৃষক জানান,পোকামাকড় কিংবা আগাছা জনিত কারণে যাতে ফসল নষ্ট না হয় সে কারণে সব সময় নজরদারি করছি। সময় মতো জমিতে ধান রোপন ও সার সহ বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে পেরেছি বলে ধান গাছ দ্রুত বেড়ে উঠেছে। মাঠে এসে জমির দিকে তাকালে মন খুশিতে ভরে উঠে।
গোয়ালডিহি ইউনিয়নের কৃষক ওবাইদুর রহমান বলেন, কয়েকদিনেই হামার ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হইছে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বাসুদেব রায় এই প্রতিবেদককে বলেন, এবছর খানসামা উপজেলায় সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। বর্তমানে রোপা আমন ধানের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় আমন ক্ষেতে গত বছরের থেকে এবার রোগবালাই কম। তাই এবারও আমরা ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।